"ফ্যাসিস্টরা যেন বাংলাদেশের মাটিতে কোনো দিন আর শেকড় গাড়তে না পারে, এটাই হোক আমাদের প্রতিশ্রুতি" বিজয় র্যালীতে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বাকৃবি ভাইস-চ্যান্সেলর


বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), ময়মনসিংহে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে ৫ আগস্ট ২০২৫,মঙ্গলবার দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। দিনের শুরুতে জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির আয়োজনে সকাল ১০.০০টায় বিজয় র
্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মো: শহীদুল হকের সভাপতিত্বে উক্ত র
্যালীতে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।
অঝোর ধারায় বৃষ্টির মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন সংলগ্ন করিডোর থেকে উক্ত বিজয় র্যালীর পদযাত্রা শুরু হয়ে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ এবং ভেটেরিনারি অনুষদ সংলগ্ন করিডোর প্রদক্ষিণ করে লাইব্রেরী ভবনের সামনে দিয়ে এসে প্রশাসন ভবনের নিচে এসে শেষ হয়। প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বক্তব্যে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন আজ আমাদের জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস। আজকের এই দিনে আমরা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি ২০২৪ সনের জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের অত্যাচারে রাজপথে শহীদ শতশত ছাত্র জনতা ও হাজার হাজার আহত বীর সেনানীকে, যাদের রক্তে এদেশের রাজপথ রঞ্জিত, সন্তানহারা মায়েদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিলো। তখন এদেশের বিপ্লবী ছাত্র জনতা, বৃদ্ধ থেকে শিশুরা পর্যন্ত প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। তখন ফ্যাসিস্ট সরকারের খুনী বাহিনীর হাত থেকে নিজেদের বাসার ছাদে কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে শিশুরাও নিরাপদ থাকেনি। সেই ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট স্বৈরাচারীনি শেখ হাসিনার পতন দিবস এবং এদেশের সংগ্রামী জনতার বিজয় বিবস।তিনি আজকের দিনে সেই সমস্ত বীর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং একই সাথে যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় মূল্যবোধসহ যেসকল সার্বিক মূলনীতি এদেশে রচিত হওয়া কাংখিত ছিলো তার বদলে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি সংবিধানে সন্নিবেশিত হয় যা ছিলো গণ-আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী। এজন্যই এদেশে ঐতিহাসিক সিপাহি বিপ্লব সংঘটিত হয়। সেই ৭ই নভেম্বর এদেশের মানুষ যেমন আনন্দে রাস্তায় নেমে এসেছিলো ঠিক তেমনিভাবে ২০২৪ সালেও গণতন্ত্রের পক্ষের ছাত্র-জনতা ৫ আগস্ট বিজয়ের আনন্দে রাস্তায় নেমে আসে। তিনি আরও বলেন, এদেশের মানুষ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ তথা বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারেখার মাঝেই নিজেদের একান্ত ঠিকানা খুঁজে পায়। ভবিষ্যতে এদেশের মাটিতে ফ্যাসিস্ট শাসনের শিকড় যেন আর গেঁড়ে বসতে না পারে, সে লক্ষ্যে আমাদের অবিচল থাকতে হবে। বৃষ্টিস্নাত সকালে কষ্ট স্বীকার করে এই বিজয় র্যালীতে অংশ নেয়ার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
উক্ত র্যালীতে ডিন কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, প্রভোস্টবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রক্টর, বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, সকল বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যবৃন্দ, বাকৃবির ছাত্র নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, কেবি কলেজের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, কেবি হাইস্কুলের শিক্ষক ও ছাত্র- ছাত্রীবৃন্দসহ অসংখ্য মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন।
দুপুর ১২.০০টায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে শিশু কিশোর কাউন্সিল এর আয়োজনে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত হয়। সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ'র সঞ্চালনায় এবং শিশু কিশোর কাউন্সিল এর সভাপতি প্রফেসর ড. মো: সামছুল আলম এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. জি. এম. মুজিবর রহমান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মো: শহীদুল হক। মোট পাঁচটি ক্যাটাগরিতে এই প্রতিযোগীতায় ক গ্রুপে জাতীয় পতাকা, খ গ্রুপে দফা এক দাবী এক, গ গ্রুপে পানি লাগবে পানি, ঘ গ্রুপে রক্তাক্ত জুলাই এবং ঙ গ্রুপে বিজয় ২৪ এই বিষয়ে ছবি আকা হয়।
সন্ধ্যা ৭.৩০টায় বাকৃবি ডিবেটিং সংঘের আয়োজনে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে বিতর্ক ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় এতে বিচারিক দায়িত্ব পালন করেন প্রফেসর ড. মো: আসাদুজ্জামান সরকার, প্রফেসর ড. মুরাদ আহমেদ ফারুখ এবং প্রফেসর ড. মো: রায়হান হাবীব। বিতর্কে আলোচ্য বিষয় ছিলো ' জুলাই পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে আর কখনো ফ্যাসিজম ফিরে আসতে পারবেনা '। পরবর্তীতে জুলাই আন্দোলনের উপর নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতায় ৫টি ক্যাটাগরিতে ৩টি করে মোট ১৫ টি পুরস্কার দেয়া হয় যেখানে প্রথম পুরস্কার লাভ করে যথাক্রমে আলভিনা আক্তার চন্দ্রিমা, সারা হোসেন, রামিসা জাহান রোজা,মোহাম্মদ তাহরিন হাসান দীপ্ত এবং জান্নাত জাহান। ভিডিও প্রদর্শনীতে প্রথম স্থান লাভ করে বাকৃবি সাংবাদিক সমিতি, দ্বিতীয় স্থান কৃষিবিদ মো: শফিকুল ইসলাম এবং তৃতীয় স্থানে যৌথভাবে কৃষিবিদ মো: আতিকুর রহমান ও দীপিকা পাল। ডিবেটিং প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণকারী সকলকেই সন্মানিত করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিন কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, প্রভোস্টবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রক্টর, বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, সকল বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যবৃন্দ, বাকৃবির ছাত্র নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ এবং প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণকারী শিশুদের অভিবাবকবৃন্দ।